Saturday 29 October 2016

Thursday 22 October 2015

ঠাকুর বাড়ির দুর্গাপূজা

তথ্য-সংকলন : শ্রী মণীন্দ্রনাথ ঠাকুর
  গ্রন্থনা        :    শ্রী রত্নেশ্বর ঠাকুর



Wednesday 21 October 2015

শিল্পী বিজন চৌধুরীর সঙ্গ

শিল্পী বিজন চৌধুরীর সঙ্গ

বিজন চৌধুরী ঢাকা আর্ট কলেজের প্রথম আবর্তনের ছাত্র ছিলেন। ছাত্রাবস্থায়ই তাঁর সৃজন-ভুবনে মৌলিক চিন্তা ও চেতনার ছাপ পড়েছিল। ১৯৫২ সালের ভাষা-আন্দোলনে তিনি সক্রিয় কর্মী ছিলেনবামপন্থায় তাঁর অবিচলিত আস্থা থাকায় তাঁর সৃজনভুবনও হয়ে উঠেছিল জীবনের নানামুখী দিকের উন্মোচন। ১৯৫৩ সালে তিনি ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হন
১৯৫৮ সালে সামরিক শাসন জারির পর রাজনৈতিক কারণে এদেশে থাকা অসম্ভব হয়ে পড়ায় তিনি কলকাতায় চলে যান। মেধামনন ও নবীন প্রকরণের গুণে তিনি পরবর্তীকালে পশ্চিমবঙ্গে নিজের আসন অর্জনে সমর্থ হন। একক ও যৌথ প্রদর্শনীর মধ্য দিয়ে তিনি ভারতবর্ষের সমকালীন চিত্রভুবনে হয়ে ওঠেন একজন ভিন্ন মর্যাদার শিল্পী
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা-অর্জনের পর নানা অনুষ্ঠানে যোগ দিতে তিনি বেশ কয়েকবার ঢাকা আসেন। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন আয়োজিত মধুমতি আর্ট ক্যাম্প অনুষ্ঠিত হয় ২০১০ সালে। সেই সময়ে একদিন এই সাক্ষাৎকার গ্রহণ করা হয়
Bijan Choudhury

সাক্ষাৎকারি : বিজনদাঅনেকদিন পর আমরা আপনাকে কাছে পেলাম। একটু স্মৃতিচারণ করা যাক। আপনার অভিজ্ঞতা আমাদের প্রয়োজন আছে। আপনি ব্রিটিশ ভারত দেখছেনস্বাধীন ভারত দেখেছেনপাকিস্তান দেখেছেনআবার বাংলাদেশ দেখেছেন। এই যে চড়াই-উতরাই পেরিয়ে নানা অভিজ্ঞতার ভেতরে আপনি এতদূর এসেছেন সেই আলোকে আপনি আজ আমাদের কিছু বলবেনআপনার জন্মজন্মস্থানপরিবারবেড়ে ওঠাসমকালীন সাংস্কৃতিক আন্দোলন ও সমাজবাস্তবতা,সর্বোপরি কীভাবে আপনি ছবির জগতে এলেন এবং - এ সম্পর্কে আমাদের কিছু জানালে আমরা উপকৃত ও প্রীত হব
বিজন চৌধুরী : আমার বাড়ি হলো ফরিদপুর জেলার তদানীন্তন মাদারীপুর সাবডিভিশনের কোটালীপাড়ায়। আমরা বৈদিক ব্রাহ্মণ। আমাদের পূর্বপুরুষ শিবরাম সার্বভৌম কোটালিপাড়ায় বসতি স্থাপন করেন। তিনি ছিলেন চাঁদ রায় ও কেদার রায়দের পুরোহিত। তাঁরা যখন আক্রান্ত হন এবং রাজ্য থেকে বিচ্যুত হতে থাকেন - তখন তাঁরা শিবরামকে কোটালিপাড়ার তালুক দিয়ে দেন এবং তাঁদের দেবতা গোবিন্দদেবের পূজার দায়িত্বভারও তাঁকে দেন। সেই থেকে তিনি কোটালিপাড়ায় বসবাস শুরু করেন। জমিদারি রক্ষাতা থেকে আয় এবং পন্ডিত হিসেবে সংস্কৃত শিক্ষাদান ও পৌরোহিত্যের সম্মানী হিসেবে পাওয়া অর্থ - এসব মিলিয়ে ছিল তাঁর আয়ের উৎস। প্রকৃতপক্ষে কোটালিপাড়া ও নগরদ্বীপ বা ভাটপাড়া - এই দুটি জায়গায় বৈদিকরা নিজেদের থিতু করেন। এখানে সংস্কৃতচর্চার একটা বিশাল জায়গা ছিল। আমার মনে পড়েখুব ছোটবেলায় আমরা যখন বর্ণপরিচয় শিখেছি - সেই সময়েই তিনি আমাদের আদ্যমধ্য ও কাব্য - এগুলো সম্পর্কে শিক্ষা দিতেনআমার জন্ম ১৯৩১ সালে ফরিদপুরে। তখন আর ঠাকুরদা নেই। ওই সময়ে বাবাজ্যাঠা,মেজোকাকাসেজোকাকা সবাই কর্মসূত্রে কলকাতায় থাকতেন। ন-কাকা থাকতেন কোটালিপাড়ায়তিনিই সব দেখাশোনা করতেন। কলকাতায় সবাই থাকত ভাড়াবাড়িতে। ছুটি বা অবকাশকালীন যাতায়াত ছিল
সাক্ষাৎকারি : আপনার শৈশবশিক্ষা কি কোটালিপাড়ায়ই শুরু হয়েছিল?
বিজন চৌধুরী : আমার প্রাথমিক শিক্ষা কোটালিপাড়ায়। তারপর কলকাতায়। কোটালিপাড়ার বালিডাঙ্গা হাই স্কুলে পড়তাম। সেখান থেকে কলকাতায়। বাবার চাকরিসূত্রে আমরা কলকাতায় বসবাস করতাম। সেখানে ওরিয়েন্টাল অ্যাকাডেমিতে ভর্তি হই। পূজার ছুটিগরমের ছুটিসহ বিভিন্ন উপলক্ষে আসতাম কোটালিপাড়ায়। আবার অনেকদিন থাকা যুদ্ধের সময়ে। ঊনচল্লিশ থেকে বিয়াল্লিশ পর্যন্ত যখন যুদ্ধ চলছিল তখন সব তো দেশের বাড়িতে। কেবল বাবাকাকা আর জ্যাঠামশাই চাকরিসূত্রে কলকাতায় থাকতেন। কলকাতা থেকে তখন সবাই ফরিদপুরে চলে এসেছে। সুতরাং বলা যায়পঞ্চাশ ভাগ এখানে থাকাপঞ্চাশ ভাগ ওখানে থাকা
সাক্ষাৎকারি : যুদ্ধের সময়ে যে কোটালীপাড়ায় চলে এলেন - তখন কি লেখাপড়া এখানেই করেছেন?
বিজন চৌধুরী : স্বাভাবিক কারণেই তা-ই করতে হয়েছিল। বোমা খাওয়ার ভয়ে একটানা তিন বছর সব এখানেইতারপর যুদ্ধের পর আবার সবাই কলকাতায় ফিরে যাই
সাক্ষাৎকারি : আপনি ম্যাট্রিকুলেশন করেছেন কোথায়?
বিজন চৌধুরী : ওরিয়েন্টাল স্কুলেকলকাতায়
সাক্ষাৎকারি : ছবি অাঁকার বিষয়টা শুরু হলো কবেকীভাবে?
বিজন চৌধুরী : আমার বাবা পেশায় সাংবাদিক ছিলেন। তিনি পূর্বপুরুষের কাছ থেকে আদ্যমধ্য ও কাব্য পড়েছিলেন। তিনি বাংলা পড়তেন এবং ওখানেই গ্র্যাজুয়েশন করেন। তারপর সাংবাদিকতা শুরু করেন। বাবার অনেক গুণ ছিল। তিনি নাটক লিখতেনতা দেশের বাড়িতে পূজার সময়ে মঞ্চস্থ হতো। কবিতাও লিখতেন
সাক্ষাৎকারি : স্বাধীন সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডের পটভূমি বলতে যা বোঝায় আর কি
বিজন চৌধুরী : তৃতীয় আরেকটি গুণ ছিল - ছবি অাঁকার। পুরনো আমলের যে ছবি দেখা যেত - যেমন অন্নপূর্ণাগ্রামের পথদেব-দেবী ইত্যাদির ছবি অাঁকতেন তিনি। অাঁকতেন অয়েলে। মনে পড়ে,তিনি অয়েলে ছবি এঁকে সেক দিয়ে শুকাতেন। ছোটবেলায় বাবার ছবি অাঁকা দেখে আমার ভেতরে ছবি অাঁকার উৎসাহ তৈরি হয়। আমি যখন ওরিয়েন্টালে নবম শ্রেণিতে পড়ি তখন স্কুল ম্যাগাজিনের জন্য বসে বসে অাঁকছিলাম গ্রামের পথ। বাবা সাধারণত লেখাপড়ার ব্যাপারে তেমন খোঁজখবর রাখতেন না। এমনকি পরীক্ষা কবে তাও খবর রাখতেন না। টেস্ট পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর বললেনসুবীরের কাছে গিয়ে ইংরেজি আর অঙ্কটা একটু দেখিয়ে নিস। আগেকার অভিভাবকরা এরকমই ছিলেন। বাবা ওই ছবিটা দেখে বললেনবাহ্! ছবিটা তো ভালো হয়েছে! ছবিটা তিনি বঙ্গশ্রীতে ছেপেছিলেন। তিনি বঙ্গশ্রীর স্টাফ ছিলেন। এতে আমি খুব উদ্দীপ্ত হই। আরো ছবি অাঁকতে থাকি। তারপর আমাদের কালিহাটির বাড়িতে আর্ট কলেজে পড়া একজন গ্র্যাজুয়েট আর্টিস্ট থাকতেনতিনি আমার বড়দার পরিচিত ছিলেন। তাঁর কাছে আমি আরো অাঁকাঅাঁকি শিখি। তিনি আমাকে স্কেচ করতে দিতেন। তিনি আমাকে অনেক সাহায্য করেছেন। তাঁর কাছে অনুশীলন করে আমি পরের বছর আর্ট কলেজে ভর্তি হলাম
সাক্ষাৎকারি : কত সালে ভর্তি হলেন?
বিজন চৌধুরী : ১৯৪৬ সালে। তখন সেটা একটা আর্ট স্কুল ছিল। রমেন চক্রবর্তী ছিলেন অধ্যক্ষ ছিলেন। কিন্তু কিছুদিন পরই তিনি চলে যান দিল্লিতে। এরপর আসেন অতুল বসু। এর কিছুদিন পর আবার রমেন চক্রবর্তী অধ্যক্ষ হন। তখন স্কুলটির নাম ছিল গভর্নমেন্ট স্কুল অব আর্ট অ্যান্ড ক্র্যাফট
সাক্ষাৎকারি : আর্ট স্কুলে আপনি কত বছর ছিলেন?
বিজন চৌধুরী : আর্ট স্কুলটাই পরে আর্ট কলেজ হয়। এর জন্য আন্দোলন করতে হয়েছিল। পাঁচ বছর পরেতখন সার্টিফিকেট দিতোকিন্তু কোনো ডিগ্রি দিত না। আমাদের বাড়িতে আইপিটিএ-র একটা আঞ্চলিক সভা হতো। আদিনাথ বাম রাজনীতি করত। ভর্তি হলো আমাদের সঙ্গে। ওর হাত ধরেই আমরা কলেজ করার জন্য আন্দোলন করি
সাক্ষাৎকারি : আপনার সঙ্গে দেবদাস চক্রবর্তীর দেখা হয়েছিল?
বিজন চৌধুরী : আমরা যখন আর্ট কলেজে ভর্তি হয়েছি তার দুবছর পরে ও ভর্তি হলো। দেবদাস আমাদের দুবছরের জুনিয়র। সে আমাদের আন্দোলনের সঙ্গে ছিল। তখন ছিল ফাইন আর্টের তিনটা ক্লাস - একজন শিক্ষককমার্শিয়ালে তিনটা ক্লাস - একজন শিক্ষকফার্স্ট ইয়ার-সেকেন্ড ইয়ারে দুটো ক্লাস - একজন শিক্ষক। ভাস্কর্যে একজন। পাঁচ বছরের কোর্স কিন্তু কোনো ডিগ্রি ছিল না। শুধু সার্টিফিকেট দিতো। আন্দোলনটা ছিল ডিগ্রির জন্য। এজন্য কলেজে স্ট্রাইকও হয়। ওই সময়ে রমেন চক্রবর্তী অধ্যক্ষ ছিলেন
সাক্ষাৎকারি: আপনাদের আটজনকে তো বহিষ্কার করা হয়েছিল। এটা কত সালে?
বিজন চৌধুরী : এটা ৪৯-এ। না, ’৪৮-এর শেষের দিকে। তারপর আমি দেশের বাড়িতে আসিএখানে কিছুদিন থাকি। এর মধ্যে বাংলা ভাষার একটি কনফারেন্স হয়। ওখান থেকে সুভাষ মুখোপাধ্যায়সলিল চৌধুরী অনেকেই আসেন
সাক্ষাৎকারি : চিটাগাংয়ে হয় এটা?
বিজন চৌধুরী : নানা। এটা হয় ঢাকার কার্জন হলে
সাক্ষাৎকারি : এটা কি ১৯৫৪ সালে?
বিজন চৌধুরী : না। তার আগেতখনো আমি আর্ট কলেজে ভর্তি হইনি। আমি তখন চিটাগাংয়ে ছিলাম। মাহবুব-উল আলম চৌধুরী আমাকে বললেন প্রোগ্রামের কথা। তাঁর পত্রিকার জন্য আমি ইলাস্ট্রেশন করে দিতাম। কলকাতায় সুভাষ মুখোপাধ্যায় তাঁর সঙ্গে আমাকে আলাপ করিয়ে দিয়েছিলেন। যাই হোকমাহবুব-উল আলম চৌধুরীর সঙ্গে আমি ঢাকায় আসি। সেই কনফারেন্সে মনোজ বসুও এসেছিলেন। কনফারেন্সে জয়নুল আবেদিনকামরুল হাসান এবং আরো কয়েকজন আসেন সবার সঙ্গে দেখা-সাক্ষাৎ করতে। কার্জন হলেই জয়নুল আবেদিনের সঙ্গে আমার দেখা। তিনি আমাকে জিজ্ঞেস করলেনআমি এখন কী করছি। আমি বললামবহিষ্কার হয়ে এ অবস্থায় আছিতখন তিনি আমাকে ঢাকায় ভর্তি হতে বললেন। আমি অভিভাবকদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করে ঢাকা আর্ট কলেজে ভর্তি হই
সাক্ষাৎকারি : দেবু?
বিজন চৌধুরী : দেবু তখন কলকাতায়
সাক্ষাৎকারি : দেবুও তো বহিষ্কৃত হয়েছিল?
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। আমরা তো একসঙ্গেই ছিলাম
সাক্ষাৎকারি : আপনি তখন এখানে আর দেবু তখন ভর্তি হয়নি
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। আমি তখন দেবুকে চিঠি লিখলাম এবং এখানে ভর্তির কথা জানালাম। ওর বাড়ি তো ফরিদপুরে। পরের বছর ও ভর্তি হলো। শাঁখারিবাজারে ও আমার সঙ্গে থাকত
সাক্ষাৎকারি: আপনার সঙ্গে সহপাঠী হিসেবে আর কারা কারা ছিল?
বিজন চৌধুরী : আমিনুলহামিদুর রহমানআবদুর রহমান ভুঁইয়া ও শামসুল কাদের। বস্ত্তত ওই ইয়ারের আমরা ছিলাম পাঁচজন। এর মাঝে হামিদ চলে গেল লন্ডনে
সাক্ষাৎকারি : হ্যাঁনাজির ভাইয়ের বড় ভাইয়ের কাছে
বিজন চৌধুরী : সবাই একসঙ্গেই স্কেচ করেছি। সদরঘাটে ঘুরেছি
সাক্ষাৎকারি : আপনারা তো দল বেঁধে যেতেন?
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। দল বেঁধে ঘুরতাম এবং কাজও করতাম
সাক্ষাৎকারি : ওই সময়ে সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধু কে ছিল আপনার?
বিজন চৌধুরী : আমিনুলই সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ। আমি যখন প্রথম এলাম তখন তো আর বাড়িভাড়া করিনি। আমিনুল আমাকে ওদের বাসায় রেখেছিল। শান্তিনগরের বাড়িতে। দুজন একসঙ্গে বের হতাম সাইকেলে চড়ে। ইত্যাদিইত্যাদি
সাক্ষাৎকারি : অ্যাকাডেমিক পড়াশোনার বাইরে আর কীভাবে সময় কাটাতেন?
বিজন চৌধুরী : ইস্টার্ন প্রসেস বলে একটি ব্লক ফার্ম হয়েছিল। মদনমোহন বসাক রোডে। ওখানে আমি ব্লকের জন্য ইলাস্ট্রেশনের কাজ করতাম। রাতেতিন ঘণ্টা করে। এখান থেকে তখন মাসে পেতাম ষাট টাকা। ফলে আমাকে আর জ্যাঠার কাছ থেকে মাসিক তিরিশ টাকা নিতে হতো না
সাক্ষাৎকারি : ষাট টাকা তো তখন অনেক টাকা
বিজন চৌধুরী : তখন শাঁখারিবাজারে একটি বাসা নিলাম। দুইটা ঘর দশ টাকা। সেই সময়ে দেবুকে নিয়ে এলামনিজেরা রান্না করে খেতাম
সাক্ষাৎকারি : সে-সময়ে ঢাকা আর্ট কলেজের শিক্ষাপদ্ধতি আর আপনি কলকাতায় যেভাবে শিখছিলেন - এর মধ্যে কারিকুলামে মিল বা পার্থক্য কেমন ছিল?
বিজন চৌধুরী : একরকমই মনে হতো। আবেদিন সাহেবকামরুল হাসানসফিউদ্দীন সাহেব,আনোয়ারুল হক - সবাই তো ওখানকারই শিক্ষক ছিলেন। ফলে প্যাটার্নটা একই। ওয়েস্টার্ন লাইফ স্টাডিস্কেচআউটডোর স্কেচতাছাড়া ওয়াটারকালার - একটা ট্র্যাডিশনাল ব্যাপার ছিল। অবিভক্ত বাংলাতেই আবেদিন সাহেবের জলরঙের কাজ একটা মাত্রা পেয়েছিল। তাঁর দুমকার সেই সিরিজ,অন্য ধরনের। কলকাতা আর্ট কলেজের জলরঙের একটা নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে। সুতরাং কলকাতা আর্ট কলেজ এবং ঢাকা আর্ট কলেজের বিষয়গুলোর মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখিনি
সাক্ষাৎকারি : আচ্ছা বিজনদাআপনি যখন এখানে এলেন তখন তো ভাষা আন্দোলন চলছিলসেই বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতা থেকে কিছু বলুন
বিজন চৌধুরী : তখন ইসলামপুর রোডে সওগাত প্রেসে সাহিত্য সংসদের সঙ্গে যুক্ত অনেকেই আসত এবং মতবিনিময় হতো। সপ্তাহে দুদিন বা তিনদিন শিল্পী-সাহিত্যিকরা আসতেন
সাক্ষাৎকারি : ওখানে তো হাসান হাফিজুর রহমানকে দেখেছেন
বিজন চৌধুরী : সেই সময়ে হাসান হাফিজুর রহমান এবং আনিসুজ্জামানের সঙ্গে আমার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বোরহানউদ্দিন খান জাহাঙ্গীরমুর্তজা বশীর আরো অনেকেই ছিল। সেই সময়ে অজিত গুহের বাড়িতে অমিয় চক্রবর্তীসর্দার জয়েন উদ্দিনশামসুর রাহমান - অনেকেই আড্ডা দিতেনসবার সঙ্গেই একটা ভালো সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমিনুল ও বশীরের মাধ্যমেই কমিউনিস্ট পার্টির লোকজনের সঙ্গে আমার সখ্য গড়ে ওঠে। একসঙ্গে কাজও করি। যদিও আমি তখনো পার্টির সদস্য হইনি। সাহিত্য সংসদের ভাষা ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনের নানা কার্যক্রমের সঙ্গে আমি একাত্ম হয়ে যাই
সাক্ষাৎকারি : তখন আমিনুলের কাছে বোম্বে থেকে ক্রসরোড নামের একটা পত্রিকা আসত। সেটা ও আমাকে মাঝে মাঝে দিত পড়ার জন্য
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। এর মাঝে একটা ঘটনা ঘটলকালিদাস চক্রবর্তী আরমানিটোলা থেকে এসে থাকলেন সাতাশ নম্বরে। আশুতোষ তাঁর বাবাপন্ডিত ছিলেন। তিনি একটা সরকারি স্কুলে পড়াতেন এবং রমনা কালীমন্দিরের পুরোহিতের কাজ করতেন। তিনি নামকরা শিক্ষাবিদ ছিলেন। কালিদাস কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। কালিদাসের সঙ্গে আমার পরিচয় হলো আমিনুলদের মাধ্যমেতাঁর বোনের সঙ্গে আমার বিয়ে হয়। নারায়ণগঞ্জে একটি জায়গায় পার্টির ক্লাস হতো। আমি,আমিনুলজাহাঙ্গীরবশীরআনিসুজ্জামান এবং আরো অনেকে সেখানে ক্লাস করতে যেতাম। একবার গ্রামের মধ্যে নদীর ওপারে আমরা চারদিন থাকলামদেখলাম। এরকম করে এখানকার রাজনৈতিক বা সাংস্কৃতিক নানা কর্মকান্ডের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি
সাক্ষাৎকারি : কারা কারা ক্লাস নিতেন?
বিজন চৌধুরী : কমিউনিস্ট পার্টির জেলা কমিটির সদস্যরা ক্লাস নিতেন
সাক্ষাৎকারি : খোকা রায় নামে একজন ছিলেন
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। গেন্ডারিয়ায় একজন থাকতেন। রুদ্র। তিনি তখন আন্ডারগ্রাউন্ডে। এ রকম লোকজন ছিল
সাক্ষাৎকারি : এরপর যে ভাষা-আন্দোলনটা হলো - আমার মনে আছে আমাদের আর্ট কলেজের একটা প্রদর্শনী হওয়ার কথা ছিল নিমতলি জাদুঘরে। আমরা তখন প্রস্ত্ততি নিচ্ছিলাম
বিজন চৌধুরী : আমাদের আর্ট কলেজ থেকে সাধারণত তিনজন সংগ্রাম কমিটির সদস্য থাকতেন
সাক্ষাৎকারি : আপনি তো সংশ্লিষ্ট ছিলেন
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। আমিইমদাদ ও আমিনুল। ওই আন্দোলন থেকে নতুন একটি বাঙালি চেতনার অনুভব জাগরণের দিকে মোড় নিচ্ছিল। ওই আবিষ্টতায় তখন আমরাও নিমজ্জমান। আরো একটা জিনিস শুনে তোমাদের ভালো লাগবে। ভাষা আন্দোলনের সময় ইমদাদরা একটা হোস্টেলে থাকতইসলামপুরের ওই দিকটাতেই। আমিনুলবশীরআমিইমদাদ এবং আরো অনেকেই ওখান থেকেই প্রথম ভাষা আন্দোলনের পোস্টার বের করেছিলাম
সাক্ষাৎকারি : তখন কি হাতে লেখা পোস্টার ছিল?
বিজন চৌধুরী : নাহাতে লেখা পোস্টার নয়। লিথো কেটে ছাপ দিয়ে বানানো হতো। প্রথমে বশীর করত। পরে আমাকে দেওয়া হয়েছিল দায়িত্ব। পোস্টার লাগানোর জন্য একটা টিম ছিল। বশীর আসত সাইকেল নিয়ে। আরমানিটোলাহাজারিবাগপোস্তগোলাসহ বিভিন্ন জায়গায় সাঁটা হতো পোস্টারগুলো। কলতাবাজারের ভেতরে গিয়ে একবার পোস্টার লাগাচ্ছি - এর মধ্যে লোকজন জমে গেল এবং আমাদের ঘিরে ফেলল। আমরা কী করছি লোকজন বুঝতে পারছিল না
সাক্ষাৎকারি : মজার ব্যাপার তোএটা কেউ জানেই না!
বিজন চৌধুরী : তারা জেরা করতে লাগল। তোমরা কি পাকিস্তানবিরোধীএই জাতীয় প্রশ্ন। বশীর বললআমরা বাংলা ভাষা নিয়ে আন্দোলন করছি। এ আন্দোলন আমাদের মাতৃভাষা রক্ষার আন্দোলন। সবাইকে নিয়ে শেষে একটা স্ট্রিট ক্রাউড হয়ে গেল। কলতাবাজারের সবুজের কথা মনে আছে। ওই যে ইলাস্ট্রেশন করত। ও তো লোকাল ছেলে। ও এসে যুক্ত হওয়ায় পরিবেশটা আরো চাঙ্গা হয়ে উঠল। পোস্টার মারতে গিয়ে আমরা বাধা পেয়েছি। ভাষা আন্দোলন নিয়ে আমরা কাজ করেছি সক্রিয়ভাবে। কামরুল হাসানও আমাদের বিভিন্নভাবে উৎসাহ দিয়েছেন। তবে এ-ব্যাপারে সবচেয়ে বড় ভূমিকা ছিল ইমদাদের। আমিআমিনুল ও বশীর ড্রইং ও লিথোকাট করে দিতাম। আর বাদবাকি প্রিন্ট করানিয়ে যাওয়ালাগানো - সব প্রায় একাই করেছে এমদাদ। তার ভূমিকা ছিল বিশাল
সাক্ষাৎকারি : একুশে ফেব্রুয়ারি যখন গুলি হয়ে গেল তখন হাসান হাফিজুর রহমানরা একটা বই করল। সেটা ছিল একুশের সংকলন
সাক্ষাৎকারি : ওই বইটাতে লিথোতে করা কিছু কাজ আছে। বইটা বেরিয়েছিল ১৯৫৩ সালেহাসান হাফিজুর রহমান সম্পাদনা করেছিলেন
সাক্ষাৎকারি : লিথোকাটের কাজবশীরের কিছু কাজ এবং আমিনুলের কভারটা ছিল বইটাতেআপনারও কিছু কাজ আছে এই বইতে
সাক্ষাৎকারি : আপনি কি একুশের ওই দিন সম্পর্কে কিছু বলবেনআপনি তো প্রত্যক্ষভাবে জড়িত ছিলেন
বিজন চৌধুরী : মজার ব্যাপার হলোওই দিন আমাদের নিজেদের একটা কর্মসূচি ছিল নিমতলি জাদুঘরে। আমি বা আমরা কজন ওই দিন কিন্তু মিছিলে বা ওই স্পটে ছিলাম না। ওই দিন গ্যালারিতে ছিলাম। ঢাকা আর্ট গ্রুপের প্রথম প্রদর্শনী ছিল সেদিন। আমরা ওই দিকে ব্যস্ত ছিলামওখানে ছিল বশীর। আমিনুলও আমাদের সঙ্গে ছিল। আবেদিন সাহেব আমাদের প্রদর্শনীর দায়িত্ব দিয়েছিলেন। আমরা সেদিনের সব প্রত্যক্ষ বিবরণ পাই বশীরের কাছ থেকে। বশীর আমাদের মাঝে হঠাৎ করে রক্তাক্ত অবস্থায় হাজির হয়
সাক্ষাৎকারি : বশীরের হাতেই বরকত রক্তাক্ত অবস্থায় ছিলেন। বশীরকে সঙ্গে করে নিয়ে এসেছিলেন রাজ্জাক ভাই
সাক্ষাৎকারি : যখন মিছিলে গুলি হওয়ার খবরটা চারদিকে ছড়িয়ে পড়লআর আমরা যখন বশীরকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখলাম - কামরুল হাসান সাহেব ঘোষণা দিলেন - এই প্রদর্শনী হবে নাআমরা জুনিয়র যারা সবাই তাঁকে সমর্থন করলাম
সাক্ষাৎকারি : ওই প্রদর্শনীটা সেই সময়ের সবচেয়ে বড় একটা আয়োজন ছিল?
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। গ্রুপ প্রদর্শনী হিসেবে সেটা অনেক বড় ছিল
সাক্ষাৎকারি : আপনি ফাইনাল পরীক্ষা দিলেন কবে?
বিজন চৌধুরী : ফাইনাল পরীক্ষা দিলাম ১৯৫৩-তে। তখন আমরা প্রথম আবর্তনের ছাত্ররা বের হলাম
সাক্ষাৎকারি : ওই আবর্তনে তো আমিনুলও ছিলেন?
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ
সাক্ষাৎকারি : আপনাদের দুজনের কাজ তো তখন নিত্যনতুন। আপনার একটা কম্পোজিশনের কথা মনে আছে - সেটার নাম ছিল...
বিজন চৌধুরী : কবিগান
সাক্ষাৎকারি : আমিনুল করেছিলেন বিয়েবাড়ির একটা দৃশ্য
বিজন চৌধুরী : ফাইনাল ইয়ারের মডেল ছিলেন খালেদ চৌধুরী
সাক্ষাৎকারি : তখন কিন্তু মডেল দিতেন আরো একজন - তিনি হলেন আলী আকসাদ
সাক্ষাৎকারি : পরবর্তীকালে তিনি শান্তি পরিষদ করেছেন
সাক্ষাৎকারি : খালেদ চৌধুরীর পোর্ট্রেটও তো আপনি করেছিলেন
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ
সাক্ষাৎকারি : পঞ্চাশের দশকে এখানে এসে তো একটা সময়ব্যাপী আপনার মানসগঠন ও শিল্পসত্তা তৈরি হয়েছে। সেই সময়কার ঢাকার সাংস্কৃতিক-রাজনৈতিক পরিবেশটা কেমনভাবে উপলব্ধি করেছেন?
বিজন চৌধুরী : সবকিছু নিয়ে তখন কিন্তু একটা বাঙালি অভিমান প্রচন্ডভাবে দানা বাঁধতে থাকেভাষা-আন্দোলন তার বহিঃপ্রকাশ। বাঙালিবাংলার ঐতিহ্যবাংলার সংস্কৃতি তার নিজস্ব অস্তিত্বরক্ষার ব্যাপারে সচেতন হতে শুরু করে। তার সঞ্চারণটা সমাজেও ঢুকে পড়ে
সাক্ষাৎকারি : এটা কি ভাষা আন্দোলনের ফলনাকি একেবারে মূলে ফিরে যাওয়ার চেতনা থেকে?
বিজন চৌধুরী : ওটা তো ভাষা থেকেই হয়েছে। ভাষা-আন্দোলনটাই আমাদের একটা চশমা পরিয়ে দিলো যেদেখোতোমারে দেখোতোমার অতীত দেখোতোমার নিজেকে দেখো
সাক্ষাৎকারি : নিজের খরচপাতির সহায়ক হিসেবে আপনি তো ইস্টার্ন প্রসেসে পার্টটাইম কাজ করতেন। এর মাঝে ভূতের গলিতে কামরুল ভাই একটা স্টুডিও করেছিলেন। সেখানেও কি আপনি কাজ করতেন?
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। ইস্টার্ন প্রসেস ছেড়ে দিয়ে পরে আমি কামরুল ভাইয়ের স্টুডিওতে যোগ দিইকামরুল ভাই-ই আমাকে নিয়ে আসেন
সাক্ষাৎকারি : তখন সবুরও আপনাদের সঙ্গে ছিল?
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। পার্টটাইম চাকরির পর ওখানে এসেই সংগঠিত হয়ে কাজ করি। ওটা ছিল ফুলটাইম। চাকরি পেয়েই আমি বিয়ে করি
সাক্ষাৎকারি : আপনি বিয়ে করেন কত সালে?
বিজন চৌধুরী : ১৯৫৬ সালে। আমার গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন হয় ৫৩ সালে। এর তিন বছর পর বিয়ে করি। তোমাদের একটা মজার খবর বলি। আমার যে কোর্ট রেজিস্ট্রেশন হয় - সেখানে আমার অভিভাবক হিসেবে স্বাক্ষর করেন জয়নুল আবেদিন সাহেব নিজে
সাক্ষাৎকারি : আর কন্যাপক্ষের অভিভাবক ছিলেন কামরুল হাসান। আমি একটা বইতে পড়েছিলাম
বিজন চৌধুরী : আর তৃতীয় ব্যক্তি হলেন সরদার জয়েনউদ্দিন। তিনি বিয়ের জন্য জোগাড় করলেন গয়নাগাটি। গয়না ছাড়া তো আর তখন বিয়ে হয় না। তিনি তাঁর স্ত্রীর কিছু গয়না নিয়ে আসেনআবেদিন সাহেবও নিয়ে আসেন তাঁর স্ত্রীর কিছু গয়না। পরে সব ফেরত দেওয়া হয়
সাক্ষাৎকারি : এই যে দায়দায়িত্বতাঁদের ভূমিকা - এসবই তো অদ্ভুত অভিভাবকত্ব
বিজন চৌধুরী : হ্যাঁ। একেবারে পিতৃত্বের ভূমিকা। যেন নিজের ছেলের বিয়ে। ছেলেবউকে তো আর খালি হাতে আনা যায় না
সাক্ষাৎকারি : খুবই মজার ব্যাপার এটা
সাক্ষাৎকারি : বিয়ের পরে তো শাঁখারিবাজারে ছিলেন। ওখানে কতদিন ছিলেন?
বিজন চৌধুরী : ধরুন বিয়ে হলো ১৯৫৬-তে। ৫৮-তে চলে যাই কলকাতায়
সাক্ষাৎকারি : আপনার প্রথম সন্তান জন্মেছে কোথায়?
বিজন চৌধুরী : গর্ভে এসেছে এখানে। কিন্তু জন্মেছে কলকাতায়
সাক্ষাৎকারি : আপনি কলকাতায় গেলেন কেনযেতে কি বাধ্য হয়েছিলেন?
বিজন চৌধুরী : নিরাপত্তাহীনতার বিষয়টা খুব তাড়া করছিল। পরিবারের ভেতরে আতঙ্ক হানা দিচ্ছিলঅলরেডি তখন আমার এক শালা মারা গেছে। ও তো গ্রেফতার হয়েছিল। ওকে রেখেছিল ময়মনসিংহ জেলে। সেখানে ও অনশন করছিল। কর্তৃপক্ষ ওকে জোর করে অনশন ভাঙানোর জন্য গলার ভেতর পাইপ ঢুকিয়ে দেয়। এতে সে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং পরে মিটফোর্ড হাসপাতালে মারা যায়তাছাড়া ৫৮-তে মার্শাল ল জারি হলে পুলিশি তৎপরতা অনেক বেড়ে যায়। আমি পুলিশের নজরে পড়ে যাই। প্রতিদিন আমাকে একবার করে থানায় গিয়ে হাজিরা দিতে হতো। ঢাকার বাইরে যাওয়া নিষেধ ছিল
সাক্ষাৎকারি : মার্শাল লর পরে এখানে দেশপ্রেমিকদের জন্য টিকে থাকা খুব কঠিন হয়ে পড়েছিলআপনি যেহেতু ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িত ছিলেনতারপর কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ছিলেন - এসব কারণে হয়তো আপনি চলে যান
বিজন চৌধুরী : আমাকে একজন কিছুদিন কলকাতায় থেকে আসতে বললেন। মার্শাল ল এলো - এখানে থাকাটা আরো বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। শেষে কলকাতা যাওয়াটা অনিবার্য হয়ে গেল
সাক্ষাৎকারি : ঢাকা থেকে কলকাতা গিয়ে আবার নতুন পরিবেশে কীভাবে নিজের প্রতিষ্ঠার জন্য সংগ্রাম করলেন?
বিজন চৌধুরী : এই যুদ্ধ ছিল প্রথমত রোজগারের যুদ্ধ। ব্যাপারটা এরকম যেপ্রথমে দাদার সংসারে গিয়ে উঠেছি। আমার স্ত্রী তখন এখানে। সে সময় ওখানে ওয়াল্টার টমসনে বিজ্ঞাপনের কাজ হতোওখানে রণেন ছিল একজন পরিচালক। এর মাঝে বঙ্গ সাংস্কৃতিক সম্মেলনে সমকালীন শিল্পীদের শিল্পকর্মের একটা প্রদর্শনীর আয়োজন করা হয় মারকাস স্কয়ারে। অরুণ বোসপ্রকাশ কর্মকারসনৎ করবিমল কুন্ডু এবং বাইরের কিছু চিত্রশিল্পী নিয়ে প্রদর্শনীটা হয়। আমার তিনটা ছবি ছিল ওখানেহাতে সামান্য যা কিছু টাকা-পয়সা ছিলতাই দিয়ে রং-তুলি আর ক্যানভাস কিনে ছবি অাঁকা শুরু করেছিলাম। ওই প্রদর্শনী-চত্বরেই রণেনের সঙ্গে আমার দেখা। ও আমাকে বললতুই তো ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে পাশ করেছিস - তোর তো জলরঙের কাজ ভালো হওয়ার কথা। সে আস্থা ওর ছিল আমার ওপর। ও আমাকে দুশো টাকা বেতনের একটা চাকরি অফার করে। সেখানেও কাজটা ছিল ইলাস্ট্রেশনের। ওখানটায় চার-পাঁচ মাস কাজ করার পরই A.S.P. Advertising Sales Promotion-এর বীরেন দে - যে কী না ভালো জলরঙের কাজ করত - আমাকে বলল ওদের ফার্মে ফিগার আর্টিস্ট দরকার। তখন আমার স্টাইলাইজড ইলাস্ট্রেশনের কাজ সুন্দরম্ নামে পত্রিকায় বেরিয়ে গেছে। সুতরাং গতানুগতিক ইলাস্ট্রেশনের বাইরে আমার নতুন স্টাইলাইজড কাজের একটা সাড়া পড়ে গেছে। তখন আমার কাজের প্রতি একটা আকর্ষণ তৈরি হয়ে গিয়েছিল। বিজন ভট্টাচার্যের অন্নদা নামের একটি গল্পের বইতেও আমি স্টাইলাইজড ইলাস্ট্রেশন করেছিলাম। সেই ইলাস্ট্রেশন করার পর আমার চাকরি হয় দুশো টাকা থেকে সরাসরি ছশো টাকার মাইনেতে
সাক্ষাৎকারি : কোথায়?
বিজন চৌধুরী : এএসপি-তে। অধিকারী বলে একজন ছিল এবং বিলেত থেকে আসা একজন ছিলেন শিল্প পরিচালকআরো দুজনগোস্বামী বলে একজন আর বীরেন দে। তখন প্রভাস সেন ছিলেন শান্তিনিকেতনে। তিনি থাকতেন খালেদ চৌধুরীর বাড়িতে। প্রভাস সেন সেট ডিরেকশনের কাজ করতেন। তিনি আমাকে একটা অফার দিলেন - ক্রাফট ভিলেজে কাজ করার জন্য। তিনিশঙ্খ চৌধুরী - এঁরা ছিলেন ইন্দিরা গান্ধীর ক্লাসমেট। তিনি তখন শ্রীনিকেতনের পরিচালক হলেন এবং আমাকে শান্তিনিকেতনে নিয়ে গেলেন। বললেনতুই ছবিও অাঁকবি আর ঢোকরা গ্রামের রিভাইজড প্রকল্পের জন্য ক্রাফট ডিজাইন করবি। ঢোকরা গ্রাম এবং এর ঐতিহ্য পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য ইন্দিরা গান্ধীর একটা ভূমিকা ছিল। যাই হোক। ক্রাফট কাউন্সিলে গিয়ে আমার বেতন দাঁড়ালো ছশো টাকা থেকে আটশো টাকা। ওখানে আমার আর ইলাস্ট্রেশনের কোনো কাজ ছিল না। যারা হাতে ক্রাফটের কাজ করত তাদের নির্দেশনা দিতাম। এভাবেই দিন কাটতে থাকল। এর মধ্যে কলকাতার সমসাময়িক বিষয়াদির সঙ্গে যুক্ত হয়ে অনেক কিছুই করেছি। একক এবং গ্রুপ প্রদর্শনী করেছিকমিউনিস্ট পার্টির প্রোগ্রাম করেছি। গণতান্ত্রিক শিল্পী-কুশলী-লেখকদের মধ্যে এভাবে নিজের একটা জায়গা করে নিয়েছি। আলোচিতও হয়েছি
সাক্ষাৎকারি : কলকাতায় ছবি অাঁকার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল আর ঢাকায় আমরা তো নতুন শুরু করি। সেখানে গিয়ে সেখানকার কাজ এবং এখানকার কাজ সম্পর্কে আপনার কাছে কী মনে হয়েছে?
বিজন চৌধুরী : আর্ট ইন্ডাস্ট্রিতে সেটা হয়নি। সেটা বীরের পতন থেকে একটা ফিডব্যাক হলো আমার। ওই সময় মেক্সিকো থেকে একটা আর্টের বই এলো আমার কাছে। সেখানে কিছু ছবি ছিলভূপাতিতকিন্তু পরাজিত নয়। একজন যোদ্ধা অশ্ব থেকে পড়ে যাচ্ছে। আহত। শুধু এই একটা ফিগারই ছিল
সাক্ষাৎকারি : আপনার একক প্রদর্শনী কবে হয়েছিল?
বিজন চৌধুরী : তখন তো আর অ্যাকাডেমি অব ফাইন আর্টস ছিল না। ছিল আর্ট ইন্ডাস্ট্রি হলসেখানে একক প্রদর্শনীগুলো হতো
সাক্ষাৎকারি : আমি একটা বইতে পড়েছিলামওই একক প্রদর্শনীটা কলকাতার শিল্পানুরাগীদের মধ্যে বেশ একটা সাড়া ফেলেছিল
বিজন চৌধুরী : সেখানে আমি প্রথম যে-সিরিজটা করি সেটা হচ্ছে পলিগিউনোসিস। ১৯৭২-এর দিকে পশ্চিমবঙ্গে যে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড চলে সেসময় আমি বাড়ির বাইরে রয়েছি। পরিবারের সঙ্গে থাকতে পারছি না। সেখানে গিয়ে কমিউনিস্ট পার্টির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। কলকাতার টালিগঞ্জে যখন কিছুদিন ছিলাম তখন সিরিজ এঁকেছিলাম। ওই সিরিজের আগে যৌথ প্রদর্শনী করলাম। সেখানে ছিলাম আমিপরিতোষ সেনআর স্কাল্পটার হিসেবে শর্বরী রায় চৌধুরী এবং নিখিল বিশ্বাস। এই গ্রুপ একটা সাড়া ফেলেছিল। এভাবে কাজ করতে করতে একসময় ইন্ডিয়ান আর্ট কলেজে যোগ দিই। এর মাঝে আমরা ক্যালকাটা পেইন্টারস গ্রুপ ফর্ম করেছি। সেখানকার সমসাময়িক আন্দোলনের মাঝে তখন আমরা একটা উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছি। মোটামুটি জায়গা করে নিয়েছিএরপর কলকাতা থেকে দিল্লিতে আমার ডাক আসে। দিল্লির আর্ট হেরিটেজের আল কাজীযিনি নাট্য অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ ছিলেন তিনি বাম চিন্তার লোক ছিলেন। একসময়ে তিনি গ্রেফতারও হয়েছিলেনতিনি কোনো কারণে ওখানে একটা ইউনিভার্সিটিতে লেকচার দিতে এসেছিলেন। তিনি আমার কিছু কাজ দেখেন। কিছু কাজের ফটোগ্রাফিও করে নেন। দিল্লিতে আর্ট হেরিটেজে তিনি আমার একক প্রদর্শনীর আয়োজন করেন। প্রথম প্রদর্শনীতেই আমার দেড় লাখ টাকার ছবি বিক্রি হয়ে যায়একেকটা ছবির দাম তখন বিশ হাজারতিরিশ হাজার বা চল্লিশ হাজারের কমে ছিল না। এ প্রদর্শনীতে আমার একটা সিরিজ ছিল এবং কয়েকটা একক ছবি ছিল। পরে আরো হয়েছে। একটা বড় ছবি বারো ইঞ্চি গুণন ছয় ইঞ্চির দাম এক লাখ টাকা এর মাঝে তিরিশ শতাংশ গ্যালারি চার্জসেবার একদিন দিল্লির একটা গ্যালারিতে তিন লাখ টাকার কাছাকাছি বিক্রি হলো। ব্যাপারটা কলকাতার সবার কাছে আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়। সেখানে এভাবে বিক্রি হতো না। তখন তো এত বিগ বিজনেসম্যান ছিল না। এই আল কাজীর সুবাদে সেখানে আমার তিনটা প্রদর্শনী হয়েছেসেটা আমাকে সর্বভারতীয় পরিচিতি দিয়েছে। তারপর আল কাজী দিল্লির একটা অকশনে আমার ছবি পাঠিয়েছিলেন। সেখানে আমার একটা ছবি চার লাখ টাকা ফেচ করেছে। তারপর অল ইন্ডিয়া গ্যালারিযারা ওয়েবসাইটে ছবি টাঙায় তাদের কাছেও ছবি সেল দিয়েছেন আল কাজী। আসলেই আমার ভারত তথা বৃহত্তর বিশ্বে পরিচিতির ক্ষেত্রে আল কাজীর ভূমিকা বিশাল। তারপর আমি গ্যালারি এইটিতে একটা প্রদর্শনী করি। সেটা ছিল মিউজিক সিরিজরাগমালা সিরিজ। মিউজিক সিরিজটা ছিল বাংলা গানের একটা ধারাবাহিক বিবর্তনের ছবি। এগুলো একেকটা ভিন্ন রাগের ওপর ছিলএগুলো গানের সঞ্চারীর ভূমিকায় ছিল। সেখানে বিষু দেবতাপস চক্রবর্তীজ্ঞান গোঁসাইআক্তারী বাই - ওঁদের গান ছিল। আক্তারী বাইয়ের কিন্তু প্রচুর বাংলা গান আছে। গানের বাণীর ভেতরে এবং পরিবেশনার ভেতরে যেসব সামাজিক বাস্তবতা বা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে - তাই আমি ছবিতে আনার চেষ্টা করেছি। যেমন ফুলে ফুলে কী কথা’ এসবের চিত্রকল্প। এটা প্রথমে বারোটা ছবি দিয়ে করেছিলাম। মজার ব্যাপার হলোপ্রথম আমার একটা প্রদর্শনীতে সমস্ত ছবিই বিক্রি হয়ে গেল,গ্যালারি এইটিতে
এমনি করে কাব্যসাহিত্যের পুরোটা সিরিজ করেছি। সেটা হলো বড়ু চন্ডীদাস ও বিদ্যাপতি থেকে আরম্ভ করে মনসামঙ্গল কাব্যটাব্য হয়ে ঢুকলাম মধুসূদন ও রবীন্দ্রনাথে। তারপর জীবনানন্দসমর সেনসুভাষমনীশ ঘটক - এইসব। আধুনিককালের শক্তিসুনীল থেকে শুরু করে জসীমউদ্দীন,শামসুর রাহমানআল মাহমুদ প্রমুখ। এ বাংলার চারজন ছিল। আল মাহমুদ যখন কলকাতায় যায়,আমাকে বললআপনি যে ছবি এঁকেছেনআমি শুনেছি। যাই হোকছবিগুলো সবাই সানন্দে গ্রহণ করেছিল
সাক্ষাৎকারি : আপনি কলকাতা গেলেন এবং একটা বৃহত্তর পটভূমির মুখোমুখি হলেন। সেখানকার তো একটা এসটাবলিশড ব্যাকগ্রাউন্ড ছিল। এখান থেকে ওখানে গিয়ে আপনার কী মনে হলো?আমাদের এখানকার ইয়ং যারা কাজ করছিল - এই আমাদের কথাই ধরুন - আমরা যারা ছবির কাজ করছিলামএর পরিপ্রেক্ষিতে ওখানকার যারা তখন কাজ করছিল - আপনার কী মনে হয়েছিল?
বিজন চৌধুরী : প্রথমে মনে হয়েছিলএকইরকম পরিবেশ। জয়নুল আবেদিনকামরুল হাসান,সফিউদ্দীন প্রমুখ। যারা কাজ করছিল প্র্যাকটিক্যালি এ-বাংলা ও-বাংলার একই ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য তাতে ছিল। কিন্তু কলকাতায় তখন একটা আধুনিক জিনিস ঢুকছে এবং নানারকম পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছেনতুন স্টাইলের চেষ্টা হচ্ছে। সেখানে যা হচ্ছিল তার সঙ্গে তুল্য বিচারের জন্য এখানে কী হচ্ছে তার খবরও কম রাখতাম। সুযোগটাও ছিল না। পরবর্তীকালে আমি যখন বারবার এসেছি - সেখানে বরঞ্চ বিপরীত প্রতিক্রিয়া হয়েছে। সেটা হলো যেএখানে দেখলাম নানারকমের পরীক্ষা-নিরীক্ষা হচ্ছেসবাই বিদেশে যাচ্ছে-আসছে। তার মানে তখন আন্তর্জাতিকতা শুরু হয়ে গেছে। এখন ধরোওরা কামরুল হাসানজয়নুল আবেদিনের নাম জানেকিন্তু কাইয়ুম চৌধুরীর নাম জানে না। ইউনুসের যদি নাম বলি কেউ চিনবেই না। আমার নিজের মনে হয় যেঢাকা পরীক্ষা-নিরীক্ষায় কলকাতার চেয়ে এগিয়েই আছে। এটা আমার ধারণা। সে তুলনায় কলকাতা অনেকটা রক্ষণশীল
সাক্ষাৎকারি : আপনি যেটা বলছেনকলকাতার লোকজন কিন্তু তা মেনে নিতে চায় না
বিজন চৌধুরী : মেনে নিতে চায় নাতার কারণ আছে। যেমন তারা আল মাহমুদ বা শামসুর রাহমানদের চেনেতাঁদের বই বা লেখা পড়ে। কিন্তু ছবি তো তারা দেখতে পায় না। বই তো ছাপা হয়দোকানে কিনতে পাওয়া যায়। কিন্তু ছবি তো চোখে দেখতে হয়। বইপত্রপত্রিকা ওখানে যায় কিন্তু ছবি তো সেখানে যায় না। ফলে ওরা দেখতেই পায় না। জয়নুল আবেদিনসফিউদ্দীন,কামরুলদের ওরা চেনে। কেননা ওখানে তাঁরা ছিলেন একসময়। এর মধ্যে সফিউদ্দীনকে যতটা চেনে জয়নুল বা কামরুল হাসানকে ওরা ওভাবে চেনে না। অথচ মাটিঘেঁষাআপন সংস্কৃতিঘেঁষা লোকদের ওরা ভালো করে চিনতে পারেনি। এদেশের কাজ যদি সুসংগঠিত করে ওদের দেখানো যায়তবে আমার বিশ্বাসওরা সত্যকে মেনে নেবে। এ-পর্যায়ের সাংস্কৃতিক বিনিময় খুবই জরুরি
উভয় দেশের চিত্রশিল্পীদের নিয়ে প্রদর্শনী বা ওয়ার্কশপ করার যে উদ্যোগ বেঙ্গল ফাউন্ডেশন নিয়ে থাকে - সেখানে এরকম কোনো প্রতিষ্ঠান নেই
সাক্ষাৎকারি : আপনি মধুমতি ক্যাম্পে দেখেছেনঅনেক নবীন-প্রবীণ ও প্রতিষ্ঠিত চিত্রশিল্পী ছিলেন - তাঁরা যে কাজ করেছেন আপনার কী মনে হয়েছে
বিজন চৌধুরী : এগুলো সবাইকে প্রেরণা দেয়। কাজটা তো তাৎক্ষণিকহ্যাঁ। দ্রুত কাজ করার একটা তাগাদা পায় তারা। তরুণরা ভালো কাজ করেছে। বৈচিত্র্য আছে। তবে আমার মনে হয়েছেনন-ফিগারেটিভনন-অবজেকটিভঅ্যাবস্ট্রাক্ট প্রবণতাটা একটু বেশি। এদের আধুনিকতার পেছনে ঝোঁকার একটা প্রবণতা আছে। ঐতিহ্যগত যে রূপমডার্নিস্টরা তাকে পছন্দ করে না। কিন্তু ঐতিহ্যগত রূপকে মডার্ন ওয়েতে কীভাবে প্রকাশ করা যায় তার চেষ্টা করতে হবে। নিজের মাটির পরিচয় নিয়ে কাজ করতে হবে। একটা সিকিউরেক্সরেভ্যুলাতামাইওকা যদি দেখা যায়তবে বোঝা যায় তা মেক্সিকানদেখলেই বোঝা যায়। পিকাসোর ছবি দেখলে সঙ্গে সঙ্গে বোঝা যায় সে একজন স্প্যানিশ। ওই ধরনের আভাঁগার্দওই ধরনের রিভোল্ট - আফ্রিকার আদিমতার কাছে যাচ্ছে শক্তিকে ধারণ করার জন্য। নিজেদের এইরকম জায়গাটা নির্মাণ করতে হবে আমাদের দেশ মানে নদী,নৌকামাঝিগুণটানাকৃষকতার গৃহস্থালি এবং নানা লোকায়ত ভঙ্গিনকশা - এগুলোকে নতুনভাবে উপস্থাপন করতে হবে

সব জায়গায় সবকিছুর ঊর্ধ্বে হলো পরিচয় - আধুনিকতাস্বীকয়তা বা লেটেস্ট কিছু করতে গিয়ে যেন আমরা আত্মপরিচয় থেকে সরে না যাই। আধুনিকতার নামে ছবি এ-পর্যায়ে যাচ্ছে যেএকসময়ে ফ্রেম ব্ল্যাংক হয়ে যাবে। ক্যানভাসে দুটো লাল ফোঁটা এঁকে তার ওপর প্রস্রাব করে দেখবে এখান থেকে লাল রং গড়িয়ে পড়ছে - এটাই লেটেস্ট। এরকম উন্মাদনায় পড়ে আমরা যেন আমাদের হারিয়ে না ফেলি। হারিয়ে না ফেলি আমাদের ভেতর ও বাইরের রূপ ও ঐতিহ্য